ফেসবুক ব্যবহারের ১২ টি সতর্কতা Caution in using Facebook

সারা বিশ্বে কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে এর মধ্যে এমন অনেক ব্যবহারকারী রয়েছেন যারা ফেসবুকের সঠিক ব্যববহার জানেন না বা জানলেও সেগুলো মানেন না, ফেসবুক হচ্ছে একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানে কী? সেটাই জানেন না, এর মধ্যে কিছু কিছু ব্যবহারকারী আছেন যারা ফেসবুকে এমন এমন কাজ করে থাকেন, যার ফলে পরবর্তীতে এই কাজের জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়, আজ এই পোস্টে আপনাদের জানাবো ফেসবুকে কোন কোন কাজ গুলি করা উচিৎ নয়।



ছন্দনামে ফেসবুকের ব্যবহার

ফেসবুকে অনেকে নিজের নামের পরিবর্তে বিভিন্ন ছন্দনাম ব্যাবহার করেন, এতে করে তাকে চিনতে অন্যদের অসুবিধা হয়, বিশ্বায়নের এই সময়ে ফেসবুক এখন অফিসের নানা কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, কিন্তু কেউ যদি নিজের মূল নামের বদলে অন্য কোনো নাম ফেসবুকে প্রকাশ করেন তাহলে তার ওপর অনেকেই বিরক্ত হয়, তাই আমাদের সবার উচিৎ ফেসবুকে ছন্দনাম ব্যবহার না করে নিজের আসল নাম ব্যবহার করা।


হা হা রিয়েক্ট দেওয়া

শুরুরদিকে ফেসবুকে শুধু লাইক বাটন থাকলে গত কয়েক বছর আগে এই লাইক বাটনের পাশাপাশি আরো কয়েকটি রিয়েক্ট বাটন যুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম একটি রিয়েক্ট ইমোজি হচ্ছে হা হা রিয়েক্ট, বিভিন্ন ফানি পোস্টে এই রিয়েক্ট ব্যবহার করা হয় কিন্তু অনকেই  আছেন যারা অন্যদের ব্যাক্তিগত ছবি বা আনফানি পোস্টেও এই হা হা রিয়েক্ট দিয়ে থাকেন, গত কয়েকদিন আগে অনলাইনে একটা নিউজ দেখলাম যে ফেসবুকে হা হা রিয়েক্ট দেয়ার জেরে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের এক নেতাকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে, আপনি হয়তো জানেন না বা আপনার হয়তো কোনো ধারনা নেই যে একটি হা হা রিয়েক্ট এর কারনে আপনার জীবনে কত বড় ক্ষতি হতে পারে তাই এখন থেকে এই হা হা রিয়েক্ট এর সঠিক ব্যবহার করুন।


ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা

ফেসবুক হলো একটা যোগাযোগের মাধ্যম মাত্র কিন্তু অনেকে এখানে তার নিজের ব্যাক্তিগত তথ্য এবং নিজের মানসিকতা প্রকাশ করেন, যেগুলো দেখার পর আপনার কাছের বন্ধুরাই আপনাকে ইমোশনাল ব্লাক মেইল করবে।


গ্রুপে জয়েন করা

ফেসবুকের অন্যান্য ফিচার এর মধ্যে একটি হচ্ছে গ্রুপ যেখানে একসাথে হাজার হাজার মানুষ যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার  করেন, আপনিও হয়তো-বা কোনো গ্রুপে যুক্ত আছেন, যেখানে রয়েছে হাজার হাজার মেম্বার এর মধ্যে ২-১ জন যদি আপত্তিকর কোনো পোস্ট করতেই পারে, এবং পরে যদি আপনার পরিচিত কেউ যদি এই ধরনের আপত্তিকর পোস্ট দেখে এবং এটাও দেখে যে আপনি এই গ্রুপে যু্ক্ত আছেন তাহলে তাদের চোখে আপনার প্রতি একটি নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।


অপরিচিতদের সাথে বন্ধুত্ব

ফেসবুকে বেশি বেশি লাইক কমেন্ট পাওয়ার আশায় অনেক যাকে তাকে বন্ধু বিনিয়ে ফেলেন, এটা করা উচিৎ নয় কারন ফেসবুকে বন্ধুত্বের একটা লিমিট আছে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ ৫ হাজার বন্ধু বানাতে পারবেন, অপরিচিতদের বন্ধুত্ব করলে একটা সময় দেখা যায় নিজের পরিচিত যারা আছে তারা আপনাকে বন্ধত্বের অনুরোধ পাঠাতে পারেনা, 


লিঙ্কে ক্লিক করা

ফেসবুকে অনেক স্পামার বা হ্যাকার আছেন যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লিংকের মাধ্যমে ফাঁদ পাতেন, আর জেনে না জেনে প্রায় সময় কোনো প্রোয়জন ছাড়াই অনেকে সেই লিংক গুলোতে ক্লিক করে আর ক্লিক করার পর আপনার ফেসবুকের এক্সেস চলে যায় অন্য কারো হাতে তখন তারা আপনার ফেসবুকের নাম, ইমেল ও পাসওয়ার্ড  পরিবর্তন করে দেয় আর আপনি ভাবেন কারা যেনো আপনার একাউন্ট হ্যাক করেছে।


স্প্যাম মেসেজ সেন্ড করা

কয়েক দিন আগে আমার একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড আমাকে একটি মেসেজ দেয় মেসেজটি হলো 

"এই মেসেজটি আপনার ১২ জন বন্ধুকে সেন্ড করুন তাহলে আগামীকাল সকালে একটি সুখবর পাবেন আর না পাঠলে ১২ বছরেও কোনো সুখবর পাবেন না"

এই মেসেজটি দেখার পর একটু হাসলাম তারপর তাকে আনফলো/আনফ্রেন্ড করে তার আইডিতে একটি রিপোর্ট মেরে দিলাম। ফেসবুকের পরিভাষায় এসব কাজকে স্প্যাম বলা হয়। যেকোনো স্প্যাম মেসেজ বা পোস্ট করা হলে যে কোনো সময় আপনার অনুসারীরা আপনার ফেসবুক আইডি রিপোর্ট করে দিতে পারেন, আর অতিরিক্ত রিপোর্টের কারণে আপনার আইডি হারিয়ে যেতে পারে।


ফটো/পোষ্ট শেয়ার করা

ফেসবুকের কোনো পোস্ট যদি ভালো লাগে তাহলে আমরা সেগুলো শেয়ার করি, আর এই শেয়ার করা পোস্টের মাধ্যমে আপনি কেমন মানুষ আপনার রুচি ও মানসিকতা প্রকাশ পায়, তাছাড়া কোনো ভুল তথ্যের শেয়ার করার কারণে আপনার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও হতে পারে। তাই কোনো পোস্ট শেয়ার করার আগে বুঝে শুনে শেয়ার করবেন।


শো অফ করা

আমরা সবাই রেস্টুরেন্টে যাই খাবার খেতে, কিন্তু এক শ্রেনীর লোক আছেন যারা রেস্টুরেন্টে যায় খবার সামনে রেখে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করার জন্য, 

আমার নামাজ আদায় করি আল্লাহ কে রাজি খুশি করানোর জন্য, কিন্তু কিছু লোক আছে যারা সপ্তাহে একদিন নামাজ পড়তে যায় শুধু ছবি তুলে "জুম্মা মোবারক" লিখে ফেসবুকে আপলোড করার জন্য।

এছাড়াও অনেকে আছেন যারা অন্যের বাইক, গাড়ি, দামী মোবাইল ইত্যাদি নিয়ে ছবি তুলে সেটা ফেসবুকে আপলোড করেন। এগুলো কে শো-অফ বলে মানে লোক দেখানো! এগুলো করার কারনে আপনি আপনার নিজের অজান্তেই অন্যের হাসির খোরাক হচ্ছে, আর আপনার পরিচিত যারা আছেন যারা আপনাকে ব্যাক্তিগত ভাবে চিনেন তারা এসব দেখা মাত্রই মনে মনে যে কথাটি বলেন সেটা হচ্ছে ছাল নাই কুত্তার বাঘা নাম।


অতিরিক্ত পোস্ট করা

অনেকে আছেন যারা অতিরিক্ত পোস্ট করেন, সকাল দুপুর বিকাল সন্ধা রাত, সহ যায়না কোনো সময় বাদ, তাদের পোস্টের নমুনা "এই মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম" "এখন নাস্তা করবো" "গোসল করতে যাবো" "বিকালর বন্ধু বান্ধবী সাথে ঘুরাঘুরি" রাতের আড্ডায় ইত্যাদি,,, এই ধরনের পোস্ট একদিকে অন্য ব্যবহারকারীর কাছে বিরক্তিকর অনদিকে কিছু কিছু মানুষের চোখ আপনি একটা পাগল আর পাগলরকে সবাই ইগনোর করে।


আপত্তিকর ছবিতে ট্যাগ করা

এমন অনেক মানুষের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে যারা কোনো কারণ ছাড়াই কোনো ছবিতে অন্য কোনো বন্ধুকে ট্যাগ করে থাকেন। এর মধ্য দিয়ে বন্ধুটির আপনার প্রতি খারাপ ধারণা তৈরি হয়। ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজেও এটি পছন্দ করি না ফেসবুকে ট্যাগ করা বন্ধ করার অপশন থাকলেও যারা আমাকে ট্যাগ করে তাদের কে আমি আনফ্রেন্ড করে দেই।


ফেসবুকের মাধ্যমে গেম খেলা

ফেসবুকে ব্যবহাকারীর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ক্যান্ডি ক্রাশ, লুডু কিং, সহ আরো বেশ কিছু গেম ফেসবুকের মাধ্যমে লগইন করে অনলাইন খেলেন এর ফলে আপনার ফেসবুকের সকল তথ্য চলে যায় থার্ড পার্টি কাছে এতে করে পরে আপনার ফেসবুক ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে এছাড়াও আপনি যদি কাউকে ফেসবুকে লাইভস খেলার অনুরোধ করেন তাহলে অন্য ব্যবহারকারীরা বিরক্ত হন।

সব শেষে সবাইকে একটা কথাই বলতে চাই ফেসবুকের সঠিক ব্যবহার জানুন এবং মানুন এতে করে আপনি নিজেও ভালো থাকবেন অন্যরাও ভালো থাকবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url